মুখের ক্যান্সার হচ্ছে মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের মত একটি ক্যান্সার যা ঠোঁট বা মুখে শুরু হয়। মুখের ক্যান্সারকে মুখগহ্বরের ক্যান্সারও বলা হয়ে থাকে। ঠোঁট, ঠোঁটের ভেতরের অংশ, চিবুক (বাক্কাল মিউকোসা), দাঁত, দাঁতের মাড়ি, জিহ্ববার সামনের দিকের দুই তৃতীয়াংশ, জিহ্ববার নীচের অংশ এবং চোয়াল (শক্ত চোয়াল) মুখগহ্বরের মধ্যে পড়ে।
মুখের ক্যান্সার ওরাল ভেরোকাস কারসিনোমা বা ওরাল মেলানোমা ধরনের হতে পারে। ক্যান্সারের উৎপত্তিস্থলের উপর ভিত্তি করে মুখগহ্বরের ক্যান্সার বিভিন্ন রকম হতে পারে যেমন মুখের পৃষ্ঠতলের ক্যান্সার, মাড়ির ক্যান্সার, শক্ত চোয়ালের ক্যান্সার, চীবুকের অন্তর্ভাগের ক্যন্সার, ঠোঁটের ক্যান্সার বা জিহ্বার ক্যান্সার।
পরিসংখ্যান
নতুন ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যার মধ্যে মুখগহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২.৯%। ২০২০ সালে এই ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৩,২৬০ এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় ১০,৭৫০।
ঝুঁকির কারণ এবং লক্ষণসমূহ
মুখগহ্বরের ক্যান্সারের কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে-
- লিঙ্গ(পুরুষ)
- বয়স (৪৫ এর অধিক)
- দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা
- দীর্ঘ মেয়াদী দাঁতের ক্ষত
- ফলমূল ও শাকসবজি কম আহার করা
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এমন ঔষধ সেবন
- পুর্বপুরুষদের কারো মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার থাকলে
- ক্ষতিকারক রশ্মির সংস্পর্শে থাকলে
- ত্বক, চুল, নখ ও মিউকাস মেমব্রেনে ক্ষত ও ফুলে যাওয়া
- ক্যাফেইন সমৃদ্ধ বিশেষ পানীয় পান
- তামাক সেবন
- ফ্যানকোনি’স অ্যানিমিয়া
- ডিসকেরাটোসিস কনজেনিটা
লক্ষণসমূহের মধ্যে রয়েছে ঠোঁটে বা মুখে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষত বা গোটার মত, মাড়ি, জিহ্বা বা চিবুকে সাদা বা লাল দগদগে চিহ্ন, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ, ব্যথা বা মুখে অসাড় অনুভব করা, ফুলে যাওয়ার কারণে দাঁতে ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া, ঠোঁট, মুখ বা গলায় গোটার মতো বা মোটা আস্তর পড়ে যাওয়া, চিবাতে সমস্যা হওয়া এবং ওজন কমে যাওয়া।
প্রতিকার
- সম্পূর্ণরূপে তামাক সেবন এড়িয়ে চলা
- নিয়মিত দাঁতের পরীক্ষা করানো
- পরিমিত অ্যালকোহল সেবন
- প্রতিদিন দাঁত মাজা
- রোদে কম ঘোরাফেরা করা
- সানস্ক্রিণ রয়েছে এমন লিপ বাম এবং চারিদিকে কিনারাযুক্ত টুপি ব্যবহার করা
- প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন রকম ফলমূল ও শাকসবজি রাখা
চিকিৎসা
চিকিৎসা হিসেবে রেডিও থেরাপি, অপারেশন, ব্যথানাশক ঔষধ, ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি ও কেমোথেরাপি বা কম্বিনেশন থেরাপি প্রদান করা হয়ে থাকে। অপারেশনের মধ্যে রয়েছে টিউমার অপসারণ, মোহস মাইক্রোগ্রাফিক সার্জারি, গ্লসেকটমি, ম্যান্ডিবিউলেকটমি, ম্যাক্সিলেকটমি, ট্রান্স-ওরাল রোবটিক সার্জারি (টিওআরএস), ল্যারিঞ্জেকটমি, রোগীর অবস্থা বুঝে গলা আক্রান্ত অংশ কর্তন। রেডিয়েশন দিয়ে যেভাবে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে তার মধ্যে রয়েছে এক্সটার্নাল বিম রেডিয়েশন থেরাপি, ব্র্যাকাইথেরাপি এবং অ্যাডাপটিভ রেডিওথেরাপি।